বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১১

শিক্ষা নারীকে ক্ষমতা দিচ্ছে। সেই ক্ষেত্রটা যদি আক্রান্ত হয় এর চেয়ে হতাশার ব্যাপার আর থাকে না : সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সমাজ বিশ্লেষক, লেখক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস। সম্প্রতি ভিকারুননিসা স্কুল শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, নানা ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ ও এসব বিষয়ে শাসকশ্রেণীর আচরণের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সাপ্তাহিক বুধবারের সঙ্গে। প্রবীণ এই শিক্ষাবিদের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বুধবারের নিজস্ব প্রতিবেদক আহম্মদ ফয়েজ বুধবার : আপনি একজন শিক্ষাবিদ। দীর্ঘকাল শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন ধরে, কতিপয় শিক্ষক তারই ছাত্রীদের ওপরে যৌন নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। আপনি এই পরিস্থিতিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : আমি এটাকে ভয়ঙ্কর একটা পরিস্থিতি মনে করছি। আমার রক্ত হিম হয়ে যায় যখন আমি শুনি, একজন শিক্ষক তার ছাত্রীর ওপরে এই নির্যাতন করছে। এই শিক্ষক প্রকৃত শিক্ষক নয় এটা আমি মনে করলাম। কিন্তু আমার কাছে প্রশ্ন জাগে কেমন করে সে এই শিক্ষকতায় এলো। কেমন করে শিক্ষক এই ধরনের কাজ করে? কোন প্রবৃত্তি থেকে সে এই কাজ করে? এরকম প্রবৃত্তি কেন হয়? এই ধরনের কাজের ব্যাখ্যা সোজা। এসব শিক্ষক নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। কোচিংয়ের নাম করে ছাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছে, ছাত্রীদেরও যেতে হচ্ছে। এটা তো আছেই। কিন্তু এর মূল ব্যাপারটা হচ্ছে একটা ব্যাধি। এই ব্যাধি আমাদের সমাজে ঢুকেছে। আমাদের সমাজ ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এটা অস্পষ্ট করে কোনো লাভ নেই। এই ব্যাধিটার নাম হচ্ছে পুঁজিবাদ। আমরা দু’বার বড় দুটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র বদল করেছি। কিন্তু আমরা সামাজিক রাষ্ট্রিক ব্যবস্থা বদল করতে পারিনি। রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়াশীল কাঠামোটা রয়েই গেছে। ক্ষমতায় এ আসছে ও যাচ্ছে। কিন্তু ওই যে সমাজ ব্যবস্থা, এই সমাজ কিন্তু পুরনো সমাজ ব্যবস্থা। আমরা ’৭১-এর যুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ বলি। কারণ আমরা আশা করেছিলাম, এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রেরই কেবল বদল হবে না, সমাজেরও বদল হবে। সামাজিক বিপ্লব ঘটবে এবং এই সমাজ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর স্বীকৃতি দেবে, নিরাপত্তা দেবে এবং মানুষের সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করবে। কিন্তু সেটা হয়নি।
বুধবার : সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে। এই অভিযুক্ত শিক্ষককে রক্ষা করার জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সক্রিয় রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনকে পবিত্র স্থান হিসেবে ধরা হয়। শিক্ষাঙ্গনে এই ধরনের আচরণ সামাজিক প্রেক্ষাপটে কতটা বিপজ্জনক বলে আপনার কাছে মনে হয়?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : মানুষ তার দৈনন্দিন জীবিকার কাজে এতটাই ব্যস্ত যে, এর প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের বিষয়ে মোটেও ভাবে না। কাজেই এই ঘটনাটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ঘটনা বহুই ঘটেছে, কিন্তু এই ঘটনাটি চরম ঘটনা। এরকম তো আমরা আর দেখিনি। যারা কর্তাব্যক্তি তারা এটা জেনেও এটাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ওই দুর্বৃত্ত শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বিপদ ছিল মেয়েটার, মেয়েটার পরিচয় প্রকাশ পেলে সামাজিকভাবে হেয় হবে, সে এবং তার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু ঘটনাক্রমে এই মেয়েটা অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। সে নীরবতা ভঙ্গ করেছে। এই দুর্বৃত্ত চিহ্নিত হয়েছে, তার শাস্তি আমরা দাবি করছি। শাস্তি হবে হয়তোবা, কারণ বিষয়টি অনেক বেশি আলোচনায় চলে এসেছে। কিন্তু শুধু একজন দুর্বৃত্তকে শাস্তি দিয়ে তো আমরা যে ব্যাধিটা রয়ে গেছে সেই ব্যাধিটা দূর করতে পারব না। কাজেই এসব প্রতিরোধের আন্দোলন যেটা হচ্ছে নানা ক্ষেত্রে, আমাদের জাতীয় সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে, পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে, নির্যাতন প্রতিরোধে যে আন্দোলন হচ্ছে, সব কিছুই কিন্তু ইঙ্গিত করে সমাজ একটা অসুস্থ এবং বিকারগ্রস্ত সমাজ। এর চিকিৎসা শুধু উপশম দ্বারা হবে না, এর নিবারণ করতে হবে এবং সমাজের মধ্যে একটা মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। যেই সমাজ গণতান্ত্রিক হবে এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
বুধবার : ইতিপূর্বে যৌনসন্ত্রাসের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির ব্যবস্থা হয়নি। রাষ্ট্রের এই দায় মুক্তির কারণেই এ ধরনের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে বলে মনে করেন কি?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : এটা তো অবশ্যই। যদি দুর্বৃত্তদের শাস্তি হতো তাহলে তারা ভয় পেত। তাদের তো শাস্তি হয় না, জানা যায় না কি ঘটলো। এ কারণেই অন্য দুর্বৃত্তরা আবার সাহস পায়। রাষ্ট্র কোনো মতেই দায় মুক্ত হতে পারে না। দায় তো রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
বুধবার : এসব ঘটনার জন্য রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার পেছনে সরকারের ব্যর্থতা কতটুকু বলে মনে করেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব তো সরকারের ওপরেই। সরকারের ব্যর্থতাই রাজনৈতিক ব্যর্থতা। সরকারকে এখানে দেখতে হবে, প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণ কি? সরকার যদি কোনো রাজনৈতিক কারণে এসবের বিচার না করে বা পক্ষপাতিত্ব করে তাহলে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। সর্বশেষ ঘটনায়ও একটা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কথা শোনা গেছে। এটাকে উন্মোচন করতে হবে।
বুধবার : ভিকারুননিসার এই ছাত্রী কোচিং সেন্টারেই লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। তার আগে কোচিং সেন্টারে নানা ধরনের অপকর্মের অভিযোগ এসেছে। স্কুলের শিক্ষকদের আলাদা করে কোচিং পাড়ানোর বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : কোচিং সেন্টার সম্পর্কে আমাদের অনেক অভিযোগ আছে। তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেয়, ভর্তির বিষয়ে অবৈধভাবে সহযোগিতা করছে। কিন্তু যৌন হয়রানির বিষয়টি কিন্তু এতদিন আর এভাবে ধরা পড়েনি। তবে এটা চলছিল, কেউ কেউ বলছিল। কোচিংয়ের শিক্ষকরা সুযোগ নেয়। ক্লাসে তারা পড়ায় না। ক্লাসরুমে পর্যাপ্ত শিক্ষা দেওয়া হয় না বলেই শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে। জানা গেছে, এসব দুর্বৃত্ত শিক্ষক প্রলোভন দেয় কোচিং সেন্টারে গেলে তারা প্রশ্ন বলে দেবে, নম্বর বাড়িয়ে দেবে। এমনকি প্রশ্ন তৈরিও হচ্ছে কোচিং সেন্টারে। এটা একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। ঘটনা ঘটছে পুঁজিবাদের কারণে। পুঁজিবাদ সব কিছুকে পণ্যে পরিণত করছে। স্বাস্থ্যসেবা পণ্যে পরিণত হয়েছে, শিক্ষাও এখানে পণ্যে পরিণত হয়েছে। আজকে এই পণ্যের জন্য আর্থিক মূল্য তো দিতেই হয়, তাকে অন্য মূল্যও দিতে হয়। আজকে দেখা যাচ্ছে শিক্ষা নামক পণ্যটি ক্রয়ের জন্য সম্মান এবং সম্ভ্রম হারানোর মতো মূল্যও দিতে হচ্ছে। তাই আমার পরিষ্কার দাবি হচ্ছে- কোচিং সেন্টার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এটার জন্য সরকারি পদক্ষেপ দরকার এবং অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। এই বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত অল্প কয়েকজন দুর্বৃত্ত শিক্ষক। অধিকাংশ শিক্ষকই আমি মনে করি এর বিরোধী। এই কিছু শিক্ষকের কারণে গোটা শিক্ষক সমাজের বদনাম হচ্ছে।
বুধবার : আপনি সার্বিক বিষয়টিকে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রেক্ষাপটে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : এটা যে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় সেটা আমরা সবাই জানি। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সমাজের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তার উন্মোচন ঘটলো। আমরা জানি মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়, রাস্তায় নিরাপদ নয়, বাড়ির ভিতরে নিরাপদ নয়, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তারা নিরাপদ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষক থেকে শুরু করে, স্কুলের ছাত্রীও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। স্কুলের ছাত্রীর নিরপত্তাহীনতার ঘটনাটা সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ এই ছাত্রী যে প্রতিষ্ঠানে গিয়েছে, যার কাছে গিয়েছে এবং যার কাছে সে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে সেই যদি তার অনিরাপত্তার কারণ হয়ে যায় তাহলে ছাত্রীরা যাবে কোথায়? শিক্ষকের দায়িত্ব তার ছাত্রীকে রক্ষা করা, সেই জায়গায় যদি শিক্ষকই নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তাহলে কি দাঁড়ায়? এমন অনেক ভক্ষকই আমাদের সমাজে শিক্ষক হয়ে গেছেন। আমরা সমাজে বা রাষ্ট্রে যাদের রক্ষক হিসেবে দেখতে চাই, তারা ভক্ষকের ভূমিকায় চলে যাচ্ছে। আবার নানা কারণে দেখা যাচ্ছে ভক্ষকরাই রক্ষকের স্থানে চলে আসছেন। আজকে পুরো সমাজে পুঁজিবাদের যে ব্যাধিটা ছড়িয়ে পড়েছে, সেই ব্যাধিই কিন্তু সব কিছুকে ভোগের পণ্যে পরিণত করছে। এই রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছে দুর্বৃত্তরা, এরা বেকার। এখানে বেকারত্বের সমস্যাটা একটা ভয়ঙ্কর সমস্যা। বেকারত্বের দুটো মাত্রা আছে। একটা মাত্রা হচ্ছে, জীবিকার সংস্থান নেই বলে বেকার। আরেকটা হচ্ছে জীবিকার সংস্থান থাকলেও জীবনের কোনো কাজ নেই বলে বেকার। জীবনের মানে যে সৃষ্টিশীলতা, কর্মমুখরতা, উদ্ভাবনসহ এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সেই কাজগুলো সে পাচ্ছে না। রাজনৈতিকভাবে পাচ্ছে না, সাংস্কৃতিকভাবেও পাচ্ছে না। কাজেই যারা জীবিকার জন্য কাজ পেয়েছে কিন্তু জীবনের জন্য কাজ পায়নি, তারা কাজ পেয়েও বেকার। যেমন এই দুর্বৃত্ত শিক্ষকটি। তার সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। এই চ্যালেঞ্জটা কিন্তু আমাদের জীবনে ছিল, রাষ্ট্র যখন বিদেশীদের হাতে ছিল, আমরা লড়েছি। যখন রাষ্ট্র আমাদের নিজেদের হয়ে গেল, তখন আমাদের সমাজকে পরিবর্তন করা দরকার ছিল, আর মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নটাই ছিল এখানে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করল, তখন সেটাকেই মনে করলাম মুক্তি। কিন্তু আসল মুক্তি তো হয়নি। যেটা প্রয়োজন ছিল সেদিন, ওই মুহূর্ত থেকে মুক্তির যে সংগ্রাম, সমাজকে পরিবর্তিত করার যে সংগ্রাম, সমাজে বিপ্লব ঘটানোর যে সংগ্রাম- সেই সংগ্রামটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেটাই কিন্তু ছিল আমাদের সমষ্টিগত চাওয়া।
বুধবার : ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনটির অনেক সদস্যের ব্যাপারে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতির কার্যক্রম সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : এখানে ছাত্র রাজনীতির কোনো দায়িত্ব নয়, দায়িত্বটা হচ্ছে এই ছাত্র রাজনীতির নেতাকর্মীদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে। এসব হতো না যদি নিয়মিত ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হতো। ছাত্র রাজনীতি যেটাকে বলা হয়, আমি সেটাকে ছাত্র আন্দোলন বলি। ছাত্র আন্দোলন যত রকম অন্যায় ঘটে সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে। আদর্শবান ছাত্ররা তাই করেছে। এখন ছাত্র রাজনীতির নামে যেটা চলছে এখানে সেই আদর্শটা নেই।
বুধবার : সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ, রদবদল ঘটে থাকে। এটাকে আপনি কতটা বিপজ্জনক মনে করেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : এটা খুবই বিপজ্জনক। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় কিন্তু তার সামাজিক, সংস্কৃতিক নিরাপত্তা দেবে বলেই। কিন্তু যখন এই ধরনের দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ ও রদবদল ঘটে থাকে তখন এই নিরাপত্তা দেওয়া যায় না। কারণ দলীয়করণের ফলে মেধার অবমূল্যায়ন করা হয়।
বুধবার : কতিপয় শিক্ষক গণতান্ত্রিক ভাবাদর্শের প্রতি অনুরক্ত হওয়ার বদলে, নির্বিচারে রাজনৈতিক দলসমূহের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এবং দলাদলিতে যুক্ত হচ্ছেন। এটা কতটা যৌক্তিক?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : অল্প কিছু শিক্ষক এই কাজগুলো করেন। তারা তাদের নিজেদের স্বার্থের কারণেই এই কজগুলো করছে। এটা শুরু হয় এরশাদের পতনের পর থেকে। দেখা গেল দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শিক্ষকদের একটা অংশ যোগাযোগ করছে। এই যোগাযোগ করে তারা সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। এটা অল্প কিছু শিক্ষক করে। এজন্য সব শিক্ষককে দায়ী করা মোটেও উচিত নয়।
বুধবার : দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে আপনি কতটা স্বস্তিবোধ করছেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে আমি মোটেই স্বস্তিবোধ করছি না। আমি শুরুতেই বলেছি আমার রক্ত হিম হয়ে যায়। আমাদের সমাজে মেয়েদের স্থান এমনিতেই দুর্বল। এটা একটা পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এখানে শিক্ষা নারীকে একটা ক্ষমতা দিচ্ছে। সেই ক্ষমতাদানের ক্ষেত্রটাতে যদি মেয়েরা এভাবে আক্রান্ত হয় এর চেয়ে বড় দুঃখ আর হতাশার ব্যাপার আর থাকে না। আমি মনে করি এই সমাজে যদি পরিবর্তন আনতে হয় তাহলে মেয়েদের এগিয়ে আসতে হবে। মেয়েরা এগিয়ে এসেছেও। কিন্তু এই ব্যবস্থা তাদের এগিয়ে আসতে দিচ্ছে না। এখানে আমি একটা উদাহারণ দিয়ে বলব, আমাদের সমাজ কেমন করে নারীদের দেখে। এই যে মুক্তিযুদ্ধে নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের উপাধি দেওয়া হয়েছে বীরাঙ্গনা। এটা কোনো গৌরবের ব্যাপার নয়, সমাজে যদি একজন নারী বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচয় দেয় তাহলে তাকে কেউ সম্মান দেখাবে না। এই সমাজ এমন বিকৃত যে, যারা এই উপাধি দিয়েছিল তারা মনে করেছে এটা দিয়ে ওই নারীকে সম্মানিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতার্থে তাকে অপমানিত করা হয়েছে। এটা সমাজ বিকৃতিরই একটা দৃষ্টান্ত।