সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১১

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আজকে একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে : আদিলুর রহমান খান

আদিলুর রহমান খান, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর মহাসচিব এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আইন ভাঙার প্রবণতা, দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়া, আইনের শাসন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন সাপ্তাহিক বুধবার-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বুধবারের নিজস্ব প্রতিবেদক মঈনুল হক




বুধবার : পুলিশ একের পর এক নির্যাতন এবং নিপীড়নমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দল আহূত হরতাল চলাকালীন সময়ে মতিঝিলে বিরোধীদলীয় কর্মীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নিপীড়ন করল।  কিন্তু পুলিশকে এই ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। সরকারের এই উদ্যোগহীনতাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

আদিলুর রহমান খান : পুলিশ বাহিনীটাই তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ উপনিবেশিক শক্তির লাঠিয়াল হিসেবে। যা পাকিস্তানের নয়া উপনিবেশিক শাসনামলেও বজায় থেকেছে। একমাত্র ’৭১-এর জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে পুলিশ বাহিনীর একটা প্রধান অংশ যে গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছিল, তা বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি। কারণ স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই এই পুলিশ বাহিনীর ভেতর থেকেই স্পেশাল ব্রাঞ্চ নামে প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। রাজনৈতিক কর্মীদের দমন-পীড়নের জন্য তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। তখন জাতীয় রক্ষী বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। ত্রিশ হাজার বামপন্থী নেতাকর্মীকে তখন হত্যা করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন সরকারের আমলে গোয়েন্দা বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার নামে মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে এবং তার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। পুলিশ বাহিনী বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার, তা আমাদের দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেই। যদিও তাদের ঘোষণাপত্রে বিভিন্ন সময় ইতিবাচক কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তারা ক্ষমতায় আসার পরে জনগণ তাদের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখেনি। বর্তমান সরকার এর আগেও ক্ষমতায় ছিল এবং এখন যারা বিরোধী দলে আছেন তারাও ইতিপূর্বে ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু জনগণের বন্ধু হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যে পরিবর্তনটা আনা দরকার ছিল তা তারা আনেননি।

বুধবার : নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারের পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক দফার একটিতে অঙ্গীকার করেছিল- আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। ইশতেহারের আলোকে এবং মানবাধিকার প্রশ্নে পুলিশের বর্তমান কর্মকান্ড মূল্যায়ন করুন।

আদিলুর রহমান খান : মূলত এসব রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সময় নির্বাচন পার করার জন্য ইশতেহার দেয়। এটা তারা কতটুকু বিশ্বাস করেন, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় আছে। শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কথা বলব না, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ও বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন হয়েছিল। যারা যতবার ক্ষমতায় এসেছেন তারা ততবার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েই নির্বাচন পার হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু বাস্তবে তারা সংস্কারের ক্ষেত্রে জনগণের পক্ষে যৌক্তিক যেসব উদ্যোগ নেওয়া উচিত, তা নিতে বারবারই ব্যর্থ হয়েছেন। একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বলব, স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি সরকারের আমলেই মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে। যা একটি ভয়াবহ অবস্থার দিকে বাংলাদেশকে ধাবিত করছে। আমাদের দেশে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনোটিরই অবস্থান মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সহায়ক নয়। পুলিশ নিয়ত রিমান্ডে নিয়ে মানুষকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। আমিনবাজারে ছয় জন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তাদের ভূমিকা ছিল। কোম্পানীগঞ্জে দেখা গেছে পুলিশের মধ্যে যারা অপরাধী, তারা একজনকে জনগণের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে পিটিয়ে হত্যায় উদ্বুদ্ধ করেছে। এই বাইরে তো আমরা র‌্যাবের কর্মকান্ড দেখছি। যা আমাদের আবারো স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের জাতীয় রক্ষী বাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দেয়। পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যদি একটা ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব না হয় এবং এদের মধ্যকার অপরাধী সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের বাহিনী থেকে বের করে না দেওয়া যায়, তাহলে এই পুলিশ বাহিনী জনগণের পক্ষের শক্তি হিসেবে কখনোই দাঁড়াতে পারবে না। এ থেকে বেরিয়ে আসার একটাই পথ হচ্ছে জনগণের সচেতন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ।

বুধবার : গণপিটুনি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী নানা কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার পরও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সব কিছুকে আইনানুগ বলে দাবি করা হচ্ছে। যা দায়মুক্তির নামান্তর। এই অন্যায় দাবির ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে?

আদিলুর রহমান খান : ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়ায় অবশ্যই তাদের এই অন্যায় কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। যখন ২০০৮-এর নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে এই মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তখন ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের ইউপিআর সেশনে আজকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাবে। কিন্তু তারপরও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড অব্যাহত রয়েছে। হেফাজতে এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন অব্যাহতভাবে চলছে। উচ্চতর আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও রিমান্ডে নিয়ে নাগরিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে এবং দেশে ভয়াবহতম একটা নির্যাতনের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এখানে মানুষকে গুম করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ যুগে যুগে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে এবং রাষ্ট্রযন্ত্র ও সরকারের পরিবর্তন এনেছে। তাই এই পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলে জনগণ তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

বুধবার : পুলিশ নিজেই বেআইনি ঘটনা ঘটাচ্ছে, নিজেই তদন্ত কমিটি গঠন করছে এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করছে। এই স্ববিরোধিতা আইনের শাসনের সঙ্গে সঙ্গতিপরায়ণ কি?

আদিলুর রহমান খান : এই স্ববিরোধিতা কখনোই আইনের শাসনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং এটা আইনের শাসনকে একটা অপশাসনে পরিণত করে। কারণ যারাই অপরাধী সেই অপরাধী চক্রই যদি আবার নিজেদের তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে নেয়, তাহলে অপরাধ করে যে কেউই পার পেয়ে যাবে এবং সেটাকেই বলা হয় দায়মুক্তি। এই দায়মুক্তি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমিনবাজারে ছয় ছাত্র হত্যার ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার পর বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের ক্লোজ করা হলো। তার মানে হলো যে, দায়িত্ব থেকে কিছুদিনের জন্য প্রত্যাহার করা হলো। সাসপেন্ড করা হলো এবং পুলিশ কতখানি অপরাধী তা দেখা হবে বলে জানানো হলো। এর আগে কিন্তু কায়সার মাহমুদ বাপ্পীর ঘটনাতেও আমরা তদন্ত কমিটি হতে দেখেছি। এ্যাপোলো হসপিটালের স্টাফ আরিফের ক্ষেত্রেও তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো, তদন্ত কমিটি যেগুলো হয় সেগুলোর রিপোর্ট জনসমক্ষে খুব কমই প্রকাশিত হয় এবং তদন্ত কমিটি যে সুপারিশগুলো করে সেগুলো খুব কমই বাস্তবায়িত হয়। পুলিশের ব্যাপারে বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপারে যে তদন্ত কমিটি হয়েছে, তার খুব কমই কিন্তু বাস্তবায়িত হয়েছে এবং সেটা না হওয়ার সংস্কৃতিও দায়মুক্তির সংস্কৃতি। এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি বাংলাদেশের ওপর জোরেশোরে চেপে বসেছে। যদি সুষ্ঠুভাবে, নিরপেক্ষভাবে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে না পারে, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না। তখন বাধ্য হয়ে মানুষ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকল্প হিসেবে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে।

বুধবার : পুলিশ হেফাজতে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া রিমান্ডের নামেও নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও পুলিশ তা মানছে না। আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘনের এই প্রবণতা বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস করবে কি?

আদিলুর রহমান খান : আমাদের দেশে উচ্চতর বিচার আদালতের ২০০৩-এর নির্দেশনায় যে কথা বলা আছে তা নিম্ন আদালত একেবারেই গ্রাহ্য করছে না। রিমান্ডে নিয়ে কিভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে সেই নির্দেশনা না মেনে তারা অনেকটা রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যার ফলে উচ্চতর বিচার ব্যবস্থার প্রতি নিম্ন আদালতের কিছুসংখ্যক বিচারকের মনযোগ না দেওয়া এবং রাজনৈতিক স্বার্থে নির্দেশনা না মেনে চলা একটি ভয়াবহ আইনি সংকটের পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করেছে। একটি বিষয় হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে যদি কারোর মৃত্যু হয়, বা কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে যদি নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণ হয়, তা হলে অবশ্যই তা ফৌজদারি আইনের অধীনে পড়বে। কিন্তু আমাদের দেশের আইনি ব্যবস্থায় একটা সমস্যা রয়েছে যে, আপনি সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে আপনার অনুমোদন লাগবে। এই অনুমোদনটা সরকারের কাছ থেকে নিতে হয়। সরকার যখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেয়, তখন কিন্তু মামলা করার অনুমোদন আর পাওয়া যায় না এবং ক্ষতিগ্রস্তরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। বিভিন্ন তদন্ত কমিটি আমরা হতে দেখি এবং তদন্ত কমিটির ফলশ্রুতিতে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়াটা খুব দুরূহ হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে দেশে আইনের শাসন যদি শক্তিশালী করতে হয়, তাহলে ফৌজদারি বিচার কার্যক্রমকেও শক্তিশালী করতে হবে। দুর্বল ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা দিয়ে ন্যায্য বিচার পাওয়া কঠিন। যেখানে যারা অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন অথচ তাদের রক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই, সেই রকম একটা পরিস্থিতি বজায় রেখে সাধারণ মানুষের পক্ষে আইনগত অধিকার আদায় করা সম্ভব নয়।

বুধবার : সারাদেশে পুলিশকে সরকার দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের এই প্রবণতার পরিণতি কি?

আদিলুর রহমান খান : এই প্রবণতা তো আজকে শুরু হয়নি। এটা অনেকদিন ধরেই চলছে। বিভিন্ন সরকারই পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং আজকের সরকারও করছে। এই প্রবণতার পরিণতি হচ্ছে যে, পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের অনাস্থা গড়ে উঠেছে এবং মানুষ তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য, নিজেদের আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা এবং জান-মাল, সম্পত্তি রক্ষায় নিজেদের একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। যা হবে এই আইনি কাঠামোর বাইরে একটি বিকল্প ব্যবস্থা। আমরা জাতীয় মুক্তির সংগ্রামের সময় দেখেছি, যখন এই সব প্রশাসন ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল, তখন জনগণ গণপ্রতিরোধ কমিটিগুলো গড়ে তুলে তাদের জান-মাল ও সম্পদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল। যদি আজকের পুলিশ জনগণের প্রতি আক্রমণকারী বাহিনীতে পরিণত হয়, তাহলে এই আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগণ নিজেদের গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।

বুধবার : আইন-শৃঙ্খলা এবং জননিরাপত্তা রক্ষা করা পুলিশের কাজ। কিন্তু পুলিশ নিজেই যখন আইন ভঙ্গকারী হিসেবে আবির্ভূত হয় তখন সমাজে তার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে?

আদিলুর রহমান খান : পুলিশ নিজেই আইন ভঙ্গ করলে সমাজের মধ্যে আইনের শাসন বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না এবং সমাজের যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলো আছে সে কাঠামোগুলোও তখন আর মানুষের কাছে আস্থার জায়গায় থাকে না। মানুষ তখন স্বভাবতই বিকল্প চিন্তা করতে থাকে এই কাঠামোগুলোকে পরিবর্তন করে জনগনের আস্থাভাজন কাঠামো গড়ে তোলার জন্য। মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমাদের আকাঙ্ক্ষা, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের এখন যারা নিয়ন্ত্রণকারী তারা দেশকে ওই যায়গায় ঠেলে দেবেন না। যদি দেনই তাহলে এর বিকল্প কাঠামোও গড়ে উঠবে। ইতিহাস কোথাও থেমে থাকে না।

বুধবার : বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?

আদিলুর রহমান খান : বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আজকে একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ কিন্তু ‘কনভেনশন এগেনেস্ট টর্চার’ স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ যদি জাতীয় অঙ্গনে অপরাধীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছে কিছু অঙ্গীকারের ভিত্তিতে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিন্তু এই অঙ্গীকারের জবাবদিহিতা করতে হবে। আমাদের দেশে বারবার যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন বলেই আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে, যেটা আগেই বলেছি যে, জনগণের সচেতনতা, জনগণের সংগঠিত হওয়া এবং জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধের মধ্য দিয়েই আমাদের দেশের মানবাধিকারের পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব।

বুধবার : আপনাকে ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন