বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১

কয়েক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, তারা জনগণের সঙ্গে অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করছেন : খনদকার নিয়াজ রহমান

খনদকার নিয়াজ রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ। বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনা ও স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লানের পরিকল্পনাবিদ হিসেবে কাজ করেছেন। দেশের সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থা, বিপর্যস্ত গণপরিবহন, ঢাকার যানজট এবং নগর পরিকল্পনা নিয়ে তিনি তার মতামত তুলে ধরেছেন সাপ্তাহিক বুধবারের কাছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বুধবারের নিজস্ব প্রতিবেদক মঈনুল হক

বুধবার : বর্তমান সময়ে সারাদেশের সড়ক এবং মহাসড়কগুলোতে বেহাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাত্রী ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। সরকার সড়ক নির্মাণ এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করবে এটাই নিয়ম। তাহলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো কেন?
খন্দকার নিয়াজ রহমান : এই প্রশ্নের উত্তর আমি দুটো অংশে দেব। প্রথমে কিছু নৈতিক প্রশ্ন তুলব। সবক্ষেত্রে শুধু টেকনিক্যাল দিকগুলো তুলে ধরায় রাষ্ট্র পরিচালনার যে নৈতিক দিক তা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। নৈতিক দিকটির গুরুত্ব কমে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাদের চাওয়াই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। কিন্তু আমাদের মন্ত্রী ও আমলারা বোঝাতে চান যে, জনগণের চাওয়া আইনের মধ্যে না পড়ায় পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা ভুলে যান যে, জনগণ মালিক। মন্ত্রী এবং আমলা জনগণের কর্মচারী। কয়েক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, তারা জনগণের সঙ্গে অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করছেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা দেখছি, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কয়েকটি এলাকার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ বন্ধও হয়ে গেছে। এ বিষয়ে যোগাযোগমন্ত্রী জানালেন অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এ অবস্থা হয়েছে। কিন্তু বাজেট এবং অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যথেষ্ট টাকা দেওয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি। আড়াই বছর ধরে যোগাযোগমন্ত্রী মেগা প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। যার মধ্যে রয়েছে পদ্মাসেতু ও ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে। পদ্মাসেতু দেশের জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু এখুনি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কোনো সুপারিশ বিশেষজ্ঞমহল থেকে না থাকলেও যোগাযোগ বিভাগ সেটা নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত। এই প্রকল্পটি ৮/৯ হাজার কোটি টাকার। ফলে এই খাত থেকে যে লাভ আসবে তা সড়কের ছোটখাট রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজের চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণেই মন্ত্রী ও আমলারা মেগা প্রজেক্ট বাদ দিয়ে জনগণের প্রয়োজনীয় সড়ক সংস্কারে মনোনিবেশ করেননি বলে আমি মনে করি।
বুধবার : তিন অর্থবছরে সড়কখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। এত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও কেন সড়কপথের এমন বেহালদশা?
নিয়াজ রহমান : এর প্রথম কারণ হলো ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ হলো নেতৃত্ব। এক্ষেত্রে যোগাযোগমন্ত্রী সারাবছর যেদিকে ব্যস্ত থেকেছেন তার মন্ত্রণালয়ের আমলারাও সেই দিকটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে সড়কে যে ফোরলেন প্রজেক্ট তা মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে বাস্তবায়িত হবে। কাজও ইতোমধ্যে অফিশিয়ালি শুরু হয়েছে। এর ফলে সড়ক সংশ্লিষ্টরা মনেই করেছিলেন লেনের টাকায় মেরামতের কাজও হয়ে যাবে। সেই অপেক্ষায় এতদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার বেশিরভাগই বেহাত করা হয়েছে বলে আমার ধারণা।
বুধবার : বলা হয়ে থাকে সড়ক-মহাসড়কের বেহালদশার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রকৌশলীদের দায়িত্বহীনতা এবং দুর্নীতি দায়ী। এ বিষয়ে আপনি কি মনে করেন?
নিয়াজ রহমান : সরকারের রুলস অব বিজিনেসে একসময় মন্ত্রণালয়ের সর্বময় ক্ষমতা ছিল সচিবের হাতে। কিন্তু পরবর্তীতে মন্ত্রীকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ভালো-মন্দের দায় মন্ত্রীর ঘাড়েই পড়বে। মন্ত্রী বলতে পারেন না যে, তার সচিব বা প্রধান প্রকৌশলী দায়ী। তাদের দোষ থাকতে পারে। কিন্তু দায়িত্ব অবশ্যই মন্ত্রীকে নিতে হবে। দায়িত্ব আমলাদের ঘাড়ে চাপালেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।
বুধবার : সড়ক খাতের দুর্নীতির বিষয় নিয়ে এখন অনেক আলোচনা হচ্ছে। একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?
নিয়াজ রহমান : দুর্নীতির বিষয়টি শুধু সড়ক খাতে নয় এটিকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে। এই দেশটার মালিক যে জনগণ এই বোধটি আজকে আমাদের মন্ত্রী এবং আমলাদের মন থেকে মুছে গেছে। যার ফলে সড়কে মৃত্যু যখন গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তখন টাকা বরাদ্দ হয়েছে কি হয়নি তা নিয়ে তর্ক করতে তাদের বাধছে না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তারা কোনো লজ্জাবোধ করছে না এবং অপরাধবোধে ভুগছে না।
বুধবার : সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠার পর এখন তাড়াহুড়া করে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। এতে মূল সমস্যার কতটা সমাধান সম্ভব?
নিয়াজ রহমান : আমরা দেখেছি মহাসড়কগুলো পানির নিচে ডুবে আছে। এই পানিতে এখন পাথর, বালু ফেলতে হবে। তারপর এর মধ্যে বিটুমিন দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই এই কাজে গুণগত মান অর্জন করা সম্ভব হবে না। ফলে যে ইঞ্জিনিয়ার এবং কনট্রাক্টর এই কাজ করছে খুব শিগগিরই কাজটি তারা আবার পাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা সড়কে যে সংকটকালীন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা ইচ্ছা করে তৈরি করা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে জরুরিভিত্তিতে কাজ করার মধ্য দিয়ে দুর্নীতির সুযোগ বেশি থাকে।
বুধবার : সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং একটি টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের ৪২ ছাত্রের মৃত্যুসহ অসংখ্য মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সড়কপথে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ কি বলে আপনি মনে করেন?
নিয়াজ রহমান : সড়কে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্রের এই বিষয়ে মোটেও নজরদারি নেই। একটা মহাসড়কের নেটওয়ার্ক তৈরি করার পরে তার ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। যে বড় বড় রাস্তা তৈরি হচ্ছে তার কিন্তু কিছু নিয়ম-কানুন আছে। ডিজাইন করার সময় ঠিক করা হয় সড়কে কি গতিতে গাড়ি চলবে, কোন কোন যায়গায় ওভারটেক করা যাবে, কোন কোন যায়গায় মানুষ রাস্তা পার হতে পারবে ইত্যাদি বিষয়। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ অবহেলার সঙ্গে এই নিয়মগুলো ভঙ্গ করা হয়। রাস্তায় আইন মেনে চলার জন্য ৪০ বছরে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। হাইওয়ে পুলিশ বলে যারা আছে তারা কি দায়িত্ব পালন করে তা মানুষের জানা নেই। এই অবস্থায় আমাদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় হাইওয়েগুলোতে এক ধরনের গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাবে দেখা গেছে, ৫ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০ হাজার থেকে এক লাখ লোক মারা গেছেন। কোনো সভ্য দেশে মৃত্যুর পরিসংখ্যান এমন হতে পারে না। যেসব দেশে যুদ্ধ হচ্ছে সেসব দেশেই কেবল এই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।
বুধবার : সরকারের একজন মন্ত্রীর চাপে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই চালকদের পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে এই রাজনৈতিক চাপকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
নিয়াজ রহমান : আমি রাজনৈতিক চাপের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে যে প্রশ্নটি তুলতে চাই তা হলো, রাষ্ট্র একটি আইন দিয়ে পরিচালিত হতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদের প্রথম কাজ হচ্ছে আইন-কানুন প্রয়োগ হচ্ছে কিনা এবং মানুষ মেনে চলছে কিনা তা দেখা। এক্ষেত্রে একজন মন্ত্রী নিজে কিভাবে প্রচলিত আইন ভেঙে লাইসেন্স দিতে বলেন? আরো বিস্ময়কর ব্যপার হচ্ছে, গণমাধ্যম যখন বিষয়টি নিয়ে আইনের কথা বলছে মন্ত্রী তখন ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে আইন লঙ্ঘনের পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। সরকারে যারা আছেন তারা যদি আইন ভঙ্গ করতে এত বেশি উৎসাহী হন, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? আর তাছাড়া নৌমন্ত্রীর মর্জি মাফিক যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয় তাহলে সড়ক-মহাসড়কে গণহত্যা আরো বাড়বে এটা নিশ্চিত।
বুধবার : ঢাকায় যানজট নিরসনে সিসিটিভি ক্যামেরা, লেনপ্রথাসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। এখন আবার দড়ি টানিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেন ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
নিয়াজ রহমান : ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা না যাওয়ার কারণটা খুবই সাধারণ। ঢাকায় এখন স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লান তৈরি করা হচ্ছে। এর আগে ১৯৯৮-৯৯ সালে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্লান করা হয়েছে। এই প্লানগুলো তৈরির পর জাতীয় সংসদে পাস হয়। ফলে এগুলো কিন্তু আইন। এখন এই আইন প্রয়োগ করা এবং মেনে চলা পুলিশের দায়িত্ব। কিন্তু আমরা দেখছি এই আইন পুলিশসহ অনেকেই লঙ্ঘন করছে। তাহলে একটি আইন তৈরি করে যদি তা ভাঙার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে সমস্যা থেকে উত্তোরণ কখনোই সম্ভব হবে না। এখন ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হলে শেষ যে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে তা ‘স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লান’। এই প্লানের সুপারিশ অনুযায়ী প্রচুর পরিমাণে ফুটপাত তৈরি করা এবং বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প কার্যকর করা জরুরি। স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লানের প্রথম ফেসের সুপারিশ হওয়া সত্ত্বেও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কার্যকরে গড়িমসি করা হচ্ছে। এর কারণ বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট হয়ে গেলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আগ্রহের প্রজেক্ট ‘এক্সপ্রেসওয়ে’ প্রকল্পের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরুর আগে হয়তো বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট হবে না। অথচ এক্সপ্রেসওয়ের বিষয়টি কিন্তু স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লানের দ্বিতীয় পর্যায়ের শেষের দিকে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর সম্ভাব্যতা যাচাই করার কথা বলা হয়েছে।
বুধবার : সরকারি দলের কয়েকজন এমপিসহ সমাজের নানান অংশ ব্যর্থতার দায় নিয়ে যোগাযোগ ও অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। আপনার মতামত কি?
নিয়াজ রহমান : পদত্যাগের দাবির সঙ্গে আমি একমত। বিশেষ করে যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগের যে দাবি উঠেছে তা আমি শতভাগ সমর্থন করি। কিন্তু বাংলাদেশের সব সরকারের ক্ষেত্রেই যে মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই ব্যর্থতার অভিযোগ উঠুক না কেন পদত্যাগের নজির নেই। কারণ তাদের মধ্যে যে জিনিসটা সবচেয়ে কম আছে সেটা হলো লজ্জা। তারা যদি ভাবতেন তাদের বেতন-ভাতা ও গাড়ি-বাড়ির একটা অংশ একজন রিকশাচালক, একজন দিনমজুরের কাছ থেকে আসে তা হলে কখনোই দেশে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
বুধবার : সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের অন্তরায় কি এবং কিভাবে এর সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন?
নিয়াজ রহমান : প্রধান অন্তরায় হচ্ছে আমাদের ব্যবসায়িক মহল। তাদের দাবি এবং চাপের কাছে সমগ্র জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। ঢাকায় মাত্র দুই শতাংশ মানুষের কাছে ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। কিন্তু এই গাড়ির চলাচল ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থের বাইরে গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে শুধু সড়ক নয়। দক্ষ আরেকটি ব্যবস্থা হচ্ছে রেল। কিন্তু রেল সরকারি। ব্যবসায়ীদের মুনাফা এখানে অনেক কম। আর এ কারণেই এই খাতে সরকারের কোনো আগ্রহ নেই। দুই শতাংশ মানুষের ব্যক্তিগত গাড়িকে গুরুত্ব না দিয়ে যদি ৯৮ শতাংশ মানুষের গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া হতো তা হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা এমনভাবে ভেঙে পড়ত না। সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য মহাসড়কে লেন করতে হবে। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট চালু করতে হবে, ব্যক্তিগত গাড়ি আমদানি নিরুৎসাহিত করতে হবে এবং সড়কের পাশাপাশি রেলের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থার কথা যদি ধরা হয় তাহলে বলব, কোনো প্রকার নিয়মনীতি ছাড়াই ৫০ লাখ লোকের রুটিরুজির রিকশাকে রাস্তা থেকে জোর করে তুলে দেওয়া হচ্ছে। অবস্থাটা দাঁড়িয়েছে এমন যে, পুলিশের প্রধান বা মন্ত্রীর ইচ্ছা হলেই বিপুলসংখ্যক মানুষের পেটে লাথি মারা যায়। এখন আমি জনগণকে আহবান জানাব তারা যেন একটি দাবি তোলেন যে, সপ্তাহে অন্তত একদিন ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় বের করা বন্ধ রাখতে হবে। এটা যদি করা যায় তাহলে এক মাসের চার দিনে মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে ট্রাফিক ব্যবস্থার সমস্যা কোথায়। মানুষ জেনে যাবে ঢাকায় মাত্র দুই শতাংশ মানুষের জন্য ৯৮ শতাংশ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত।
বুধবার : আপনাকে ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন